প্রত্যয় নিউজ ডেস্ক: রাজধানীর আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিম শিপনকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদ ও হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়েছে।
শনিবার (১৪ নভেম্বর) সন্ধায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে ৩১তম বিসিএস ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন এ কর্মসূচির আয়োজন করে। এতে ৩১তম বিসিএসের বিভিন্ন পর্যায়ের ক্যাডাররা উপস্থিত ছিলেন।
অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডার আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তাকে এভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলার ইতিহাস বাংলাদেশে খুব কমই আছে। একজন সরকারি কর্মকর্তা রাষ্ট্রীয় সম্পদ। তাকে গড়ে তুলতে সরকারের অনেক রাজস্ব ব্যয় হয়েছে। তার মৃত্যু মানে রাজস্বের ক্ষতি, সরকারের ক্ষত, জনগণের ক্ষতি। আর যেন এভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পদকে ধ্বংস করা না হয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে, শিপন হত্যার বিচারের মাধ্যমে বাংলাদেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো শিপনকে জীবন দিতে না হয়।
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আল হাদী বলেন, বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসার নামে অবৈধভাবে যেসব হাসপাতাল গড়ে উঠেছে, চিকিৎসার নামে যারা অপচিকিৎসা দিচ্ছে, যাদের কোনো সরকারি অনুমোদন নেই, চিকিৎসার নামে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে, তাদেরকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে। এটা শুধু প্রশাসনেরই দ্বায়িত্ব নয়, সেখানকার জনপ্রতিনিধি কিংবা অন্যান্য প্রতিবেশি যারা আছে, তাদের দ্বায়িত্ব এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের মুখোশ উন্মোচন করা।
অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও পুলিশ রমনা জোনের এডিসি হারুন অর রশিদ বলেন, ৩১তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে শিপন ২য় স্থান অধিকার করেছিলেন। আমরা তার নেতৃত্বে সারদা পুলিশ একডেমিতে এক বছর কঠোর পরিশ্রম করেছি। সেখানে একছর প্রশিক্ষণকালীন তাকে কখনো অস্বাভাবিক আচরণ করতে দেখিনি।
তিনি বলেন, সারদার পরেও আট বছর ধরে পুলিশে চাকরি করছি। আমরা কখনো শুনিনি বা দেখিনি যে, আনিসুল করিম শিপন ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন বা কর্মজীবনে কোনো অস্বাভাবিক আচরণ করেছেন। উনি পুরোপুরি স্বাভাবিক ছিলেন। বরিশাল মেট্রাপলিটন পুলিশের ট্র্যাফিকের উপকমিশনার জাকির হোসেন মজুমদার স্যারও বিবৃতি দিয়েছেন যে, কর্মজীবনে তার কোনো সমস্যা ছিল না।
হারুন অর রশিদ বলেন, হঠাৎ আনিসুল করিম শিপন মানসিকভাবে একটু চুপচাপ হয়ে গেলে তাকে মাইন্ড এইড নামে একটা তথাকথিত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে যখন সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়, তিনি ওয়াশরুমে যাওয়ার কথা বলেন। শিপনের পরিবার যখন তার ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছিলেন, তখন ওয়াশরুমে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তাকে একটি বিশেষভাবে তৈরি সাউন্ড প্রুফ কক্ষে নিয়ে যেতে চান। তাদের ভা্ষায় যেটাকে বলা হয়, ‘অ্যাঙগার ম্যানেজমেন্ট রুম’।
তিনি আরও বলেন, শিপন সেখানে ঢুকতে অনিচ্ছা জানান। তখন তাকে জোরপূর্বক ৭-৮ জন ধরে নিয়ে যেতে চায়। তাদের কেউ ওয়ার্ড বয়, কেউ বাবুর্চি, কেউ দারোয়ান। তারা একবারেই অশিক্ষিত, যাদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। কোনো ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। এটা একটা হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা জোর দাবি জানাই, দ্রুত এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হোক।